দ্যা সেডো অফ বরাক :
আজ সেই ভয়াল নাইন-ইলেভেন। ২০০১ সালের এদিনে আত্মঘাতী বিমান হামলায় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা টুইন টাওয়ার। কে বা কারা এ হামলার নেপথ্যে ছিল তা জানার আগেই পুরোপুরি বদলে যায় পৃথিবী।সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়দাকে দায়ী করে আফগানিস্তান ও ইরাকে চালানো হয় ভয়ালতম গণহত্যা। ঘটনার প্রায় ষোল বছর পেরিয়ে গেলেও পৃথিবীব্যাপী তার রেশ রয়ে গেছে এখনো। এখনো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ পাকিস্তানে জঙ্গি নির্মূলের নামে প্রতিদিনই চলছে আমেরিকার ড্রোন হামলা, যাতে করে যতজন না জঙ্গি মারা যাচ্ছে, তার চেয়েও বেশি মারা যাচ্ছে বেসামরিক লোকজন।
১৯ জন আত্নঘাতী হামলাকারী এবং ৪টি বিমান
৪টি বিমানের দু’টির লক্ষ্য ছিল নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ার। অন্য একটি আঘাত করে পেন্টাগনে, যেটির অবস্থান ওয়াশিংটনের ঠিক বাইরেই আর চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়ে পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে।
প্রাণহানি
এ হামলায় তিন হাজারের মতো লোক মারা যায়। যাদের মধ্যে চারশ’র বেশি ছিলেন পুলিশ এবং অগ্নিনির্বাপণ কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রের অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের জন্য ইতিহাসের ভয়াবহতম দিন ছিল এটি। একদিনেই মারা যায় ৩৪৩ জন। দশ হাজারের মত লোক আহত হয়, যাদের অনেকের অবস্থাই ছিল গুরুতর।
সেই ভয়াল দিন
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সকাল। সেদিনের আবহাওয়া ছিল চমৎকার। মানুষ ধীরে ধীরে কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। সকাল ৮:৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৬৭ বিমানটি প্রায় বিশ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারে আঘাত করে। এটি ছিল ১১০ তলা ভবন যার ৮০তম তলায় বিমান আঘাত করে। মুহূর্তের মধ্যে কয়েকশ’ মানুষ মারা যায়। বহু মানুষ আটকা পড়ে ওপরের তলাগুলোয়। এই ভবন এবং টুইন টাওয়ারের অপর ভবন টাওয়ার সাউথ টাওয়ার থেকে লোকজন সরিয়ে নেয়া শুরু হয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে।
প্রথমে মনে করা হয়েছিল এটি কোন মাতালের কাণ্ড। কিন্তু ১৮ মিনিটের মাথায় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের আরেকটি বোয়িং ৭৬৭ বিমান সাউথ টাওয়ারের ৬০তম তলায় ঢুকে পড়ে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়, ভবনের বিভিন্ন অংশ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে আশপাশের ভবনগুলোর ওপর ছড়িয়ে পড়ে। তখনই প্রথম বোঝা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছে।
তৃতীয় বিমান নিয়ে হামলা
অসংখ্য মানুষ যখন টুইন টাওয়ারের ওপর চোখ সেঁটে রেখেছেন তখনই ৯:৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের আরেকটি বিমান বোয়িং ৭৫৭ আঘাত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদরদপ্তর পেন্টাগনের পশ্চিম অংশে। এখানেও বিপর্যয়ের কারণ ছিল জেট ফুয়েল। পেন্টাগনের ১২৫ জন সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তি মারা যান, সাথে বিমানে থাকা ৬৪ জন আরোহীর সবাই মারা যান।
বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের দু’টি টাওয়ারই ধসে পড়ে
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ঠিক কেন্দ্রে এ হামলার ১৫ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের সাউথ টাওয়ারটি ধ্বসে পড়ে। ধূলা আর ধোঁয়ার মেঘ তৈরি হয় সেখানে। আশেপাশের এক ডজনের বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয় বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের টাওয়ার দু’টির কাঠামো তৈরি হয়েছিল মজবুত ইস্পাতে, যা ঘন্টায় ২০০ মাইল বেগের বায়ু প্রবাহ, এমন কি বড় মাত্রায় অগ্নিকান্ড সহ্য করার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু জেট ফুয়েল সৃষ্ট উত্তাপ সামলে নিতে পারেনি ইস্পাতের এই কাঠামোটি। সকাল ১০:৩০ মিনিটে ধসে পড়ে অপর টাওয়ারটিও। উদ্ধারকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ভবনটির ওপরের তলাগুলো থেকে লোকজনকে উদ্ধার করতে। বহু উদ্ধারকর্মী মারা যায়।
চতুর্থ বিমানটি নিয়ে হামলার চেষ্টা ব্যর্থ
নিউজার্সির ন্যুয়ার্ক বিমানবন্দর থেকে চতুর্থ বিমানটি উড়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশ্যে। ৪০ মিনিটের মধ্যেই বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। কিন্তু বিমানটি যাত্রা করেছিল নির্ধারিত সময়ে চেয়ে দেরিতে। টেলিফোন আলাপে অনেক যাত্রীই জেনে যান টুইন টাওয়ারে হামলার বিষয়টি। বিমানটি ছিনতাইয়ের পর যাত্রীরা বুঝতে পারেন কি হতে চলেছে। কয়েকজন যাত্রী অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ককপিটে হামলা করেন, বাধা দেন ছিনতাইকারীদের। ১০:১০ মিনিটে পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে আছড়ে পড়ে বিমানটি। হামলাকারীরা বিমানটিকে আসলে কোথায় নিতে চেয়েছিল সেটি পরিষ্কার নয়। মনে করা হয়, হোয়াইট হাউজ, মেরিল্যান্ডে প্রেসিডেন্সের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ‘ক্যাম্প ডেভিড’ কিংবা পশ্চিম উপকূলে থাকা কয়েকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোন একটি ছিল তাদের লক্ষ্য।
ভবনটির নকশায় কোন ত্রুটি ছিল না
তদন্ত শেষে বলা হয় ভবনটির নকশায় কোন ত্রুটি ছিল না। এ ধরনের হামলার ঘটনা নজিরবিহীন। শত শত মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয় স্থানটি খালি করতে। ভবনটির কাঠামো ছিল ‘টিউব ইন টিউব’ পদ্ধতির। প্রতি তলায় জায়গা বাড়ানোর জন্য বাইরের দিকে বেশি পরিমাণে কলাম দেয়া হয়। আর ফ্লোর গুলোয় বেশি পরিমাণে বিম দেয়া হয়। বিমানের আঘাতের পর বিস্ফোরণ স্থলের ওপর ভবনের ওপরের অংশ ধসে পড়ে, প্রচণ্ড উত্তাপে ইস্পাত গলে যায়। ওপরের চাপ নিতে না পেরে ভবন দু’টো নিচের দিকে ধসে পড়ে।
প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ যোষণা
এ হামলা প্রচন্ড উদ্বেগ তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রে। নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশকে সারা দিনই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়। সন্ধ্যা সাতটায় হোয়াইট হাউজে ফেরেন তিনি। রাত নয়টায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা আমাদের সর্বোচ্চ ভবনগুলোর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিত কাঁপাতে পারে নি। এসব কর্মকান্ড ইস্পাত গলিয়ে দিতে পারে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ়তার যে ইস্পাত রয়েছে তাকে নয়”। সামরিক পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত তারা এবং যারা সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের মধ্যে কোন তফাত নেই”। যুক্তরাষ্ট্র তার ভাষায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী এক যুদ্ধ শুরু করে।
হামলার উদ্দেশ্য
১৯ জন হামলাকারীর সবাই ছিলেন সৌদি আরব এবং অন্য কয়েকটি আরব দেশের নাগরিক। বলা হয় সে সময়ের পলাতক ওসামা বিন লাদেন এ হামলার জন্য অর্থায়ন করেছিলেন। ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন, পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সামরিক উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে সংশ্লিষ্টরা এ হামলা চালিয়েছিলেন বলে বলা হয়।
হামলার পরিকল্পনা এবং পূর্ব উপকূল থেকে যাত্রা
হামলাকারীদের কয়েকজন এক বছরের বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছেন এবং কয়েকটি বাণিজ্যিক ফ্লাইং একাডেমি থেকে বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। বাকি কয়েকজন হামলার কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। তাদের কাজ ছিল হামলাকারীদের শক্তিবৃদ্ধি করা। তারা সহজেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বক্স কাটার এবং ছুরি নিয়ে বিমানে উঠতে সক্ষম হন। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় তিনটি বিমানবন্দর থেকে ক্যালিফোর্নিয়াগামী চারটি বিমানে চেপে বসেন তারা। গন্তব্য হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়াকে বেছে নেয়ার কারণ একটাই, দীর্ঘ যাত্রার জন্য জ্বালানিপূর্ণ থাকে এসব বিমান।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নতুন করে
২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবরে একই জায়গায় আবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে কংক্রিটের কাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। গ্লাস এবং ইন্টেরিয়রের কাজ শেষে এ বছরের মাঝামাঝি (২০১৪) সময়ে অনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার কথা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের।
যাত্রীবাহী বিমান যে কারণে ধ্বংসাত্নক
সামরিক বিমান বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক বহন করে, ফলে সেটির আঘাতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। কিন্তু যাত্রীবাহী বিমানে কোন বিস্ফোরক থাকে না। তবু মাত্র দু’টি বিমানের আঘাতই ১১০ তলা ভবন দু’টিতে ধস সৃষ্টি করেছিল। বিমানগুলো সেসময় জ্বালানি ভর্তি ছিল। বিপুল পরিমাণ জ্বালানিই ছিল বড় মাত্রায় বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। আর এ বিস্ফোরণের ফলে ভবন দু’টো ধসে পড়ে, বিমানের আঘাতে নয়।
আজ সেই ভয়াল নাইন-ইলেভেন। ২০০১ সালের এদিনে আত্মঘাতী বিমান হামলায় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা টুইন টাওয়ার। কে বা কারা এ হামলার নেপথ্যে ছিল তা জানার আগেই পুরোপুরি বদলে যায় পৃথিবী।সন্ত্রাসী সংগঠন আল কায়দাকে দায়ী করে আফগানিস্তান ও ইরাকে চালানো হয় ভয়ালতম গণহত্যা। ঘটনার প্রায় ষোল বছর পেরিয়ে গেলেও পৃথিবীব্যাপী তার রেশ রয়ে গেছে এখনো। এখনো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ পাকিস্তানে জঙ্গি নির্মূলের নামে প্রতিদিনই চলছে আমেরিকার ড্রোন হামলা, যাতে করে যতজন না জঙ্গি মারা যাচ্ছে, তার চেয়েও বেশি মারা যাচ্ছে বেসামরিক লোকজন।
১৯ জন আত্নঘাতী হামলাকারী এবং ৪টি বিমান
৪টি বিমানের দু’টির লক্ষ্য ছিল নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ার। অন্য একটি আঘাত করে পেন্টাগনে, যেটির অবস্থান ওয়াশিংটনের ঠিক বাইরেই আর চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়ে পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে।
প্রাণহানি
এ হামলায় তিন হাজারের মতো লোক মারা যায়। যাদের মধ্যে চারশ’র বেশি ছিলেন পুলিশ এবং অগ্নিনির্বাপণ কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রের অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের জন্য ইতিহাসের ভয়াবহতম দিন ছিল এটি। একদিনেই মারা যায় ৩৪৩ জন। দশ হাজারের মত লোক আহত হয়, যাদের অনেকের অবস্থাই ছিল গুরুতর।
সেই ভয়াল দিন
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সকাল। সেদিনের আবহাওয়া ছিল চমৎকার। মানুষ ধীরে ধীরে কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। সকাল ৮:৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৬৭ বিমানটি প্রায় বিশ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারে আঘাত করে। এটি ছিল ১১০ তলা ভবন যার ৮০তম তলায় বিমান আঘাত করে। মুহূর্তের মধ্যে কয়েকশ’ মানুষ মারা যায়। বহু মানুষ আটকা পড়ে ওপরের তলাগুলোয়। এই ভবন এবং টুইন টাওয়ারের অপর ভবন টাওয়ার সাউথ টাওয়ার থেকে লোকজন সরিয়ে নেয়া শুরু হয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে।
প্রথমে মনে করা হয়েছিল এটি কোন মাতালের কাণ্ড। কিন্তু ১৮ মিনিটের মাথায় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের আরেকটি বোয়িং ৭৬৭ বিমান সাউথ টাওয়ারের ৬০তম তলায় ঢুকে পড়ে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হয়, ভবনের বিভিন্ন অংশ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে আশপাশের ভবনগুলোর ওপর ছড়িয়ে পড়ে। তখনই প্রথম বোঝা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছে।
তৃতীয় বিমান নিয়ে হামলা
অসংখ্য মানুষ যখন টুইন টাওয়ারের ওপর চোখ সেঁটে রেখেছেন তখনই ৯:৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের আরেকটি বিমান বোয়িং ৭৫৭ আঘাত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদরদপ্তর পেন্টাগনের পশ্চিম অংশে। এখানেও বিপর্যয়ের কারণ ছিল জেট ফুয়েল। পেন্টাগনের ১২৫ জন সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তি মারা যান, সাথে বিমানে থাকা ৬৪ জন আরোহীর সবাই মারা যান।
বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের দু’টি টাওয়ারই ধসে পড়ে
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর ঠিক কেন্দ্রে এ হামলার ১৫ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের সাউথ টাওয়ারটি ধ্বসে পড়ে। ধূলা আর ধোঁয়ার মেঘ তৈরি হয় সেখানে। আশেপাশের এক ডজনের বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয় বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের টাওয়ার দু’টির কাঠামো তৈরি হয়েছিল মজবুত ইস্পাতে, যা ঘন্টায় ২০০ মাইল বেগের বায়ু প্রবাহ, এমন কি বড় মাত্রায় অগ্নিকান্ড সহ্য করার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু জেট ফুয়েল সৃষ্ট উত্তাপ সামলে নিতে পারেনি ইস্পাতের এই কাঠামোটি। সকাল ১০:৩০ মিনিটে ধসে পড়ে অপর টাওয়ারটিও। উদ্ধারকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ভবনটির ওপরের তলাগুলো থেকে লোকজনকে উদ্ধার করতে। বহু উদ্ধারকর্মী মারা যায়।
চতুর্থ বিমানটি নিয়ে হামলার চেষ্টা ব্যর্থ
নিউজার্সির ন্যুয়ার্ক বিমানবন্দর থেকে চতুর্থ বিমানটি উড়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশ্যে। ৪০ মিনিটের মধ্যেই বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। কিন্তু বিমানটি যাত্রা করেছিল নির্ধারিত সময়ে চেয়ে দেরিতে। টেলিফোন আলাপে অনেক যাত্রীই জেনে যান টুইন টাওয়ারে হামলার বিষয়টি। বিমানটি ছিনতাইয়ের পর যাত্রীরা বুঝতে পারেন কি হতে চলেছে। কয়েকজন যাত্রী অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ককপিটে হামলা করেন, বাধা দেন ছিনতাইকারীদের। ১০:১০ মিনিটে পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে আছড়ে পড়ে বিমানটি। হামলাকারীরা বিমানটিকে আসলে কোথায় নিতে চেয়েছিল সেটি পরিষ্কার নয়। মনে করা হয়, হোয়াইট হাউজ, মেরিল্যান্ডে প্রেসিডেন্সের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ‘ক্যাম্প ডেভিড’ কিংবা পশ্চিম উপকূলে থাকা কয়েকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোন একটি ছিল তাদের লক্ষ্য।
ভবনটির নকশায় কোন ত্রুটি ছিল না
তদন্ত শেষে বলা হয় ভবনটির নকশায় কোন ত্রুটি ছিল না। এ ধরনের হামলার ঘটনা নজিরবিহীন। শত শত মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয় স্থানটি খালি করতে। ভবনটির কাঠামো ছিল ‘টিউব ইন টিউব’ পদ্ধতির। প্রতি তলায় জায়গা বাড়ানোর জন্য বাইরের দিকে বেশি পরিমাণে কলাম দেয়া হয়। আর ফ্লোর গুলোয় বেশি পরিমাণে বিম দেয়া হয়। বিমানের আঘাতের পর বিস্ফোরণ স্থলের ওপর ভবনের ওপরের অংশ ধসে পড়ে, প্রচণ্ড উত্তাপে ইস্পাত গলে যায়। ওপরের চাপ নিতে না পেরে ভবন দু’টো নিচের দিকে ধসে পড়ে।
প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ যোষণা
এ হামলা প্রচন্ড উদ্বেগ তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রে। নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশকে সারা দিনই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়। সন্ধ্যা সাতটায় হোয়াইট হাউজে ফেরেন তিনি। রাত নয়টায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা আমাদের সর্বোচ্চ ভবনগুলোর ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিত কাঁপাতে পারে নি। এসব কর্মকান্ড ইস্পাত গলিয়ে দিতে পারে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ়তার যে ইস্পাত রয়েছে তাকে নয়”। সামরিক পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত তারা এবং যারা সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের মধ্যে কোন তফাত নেই”। যুক্তরাষ্ট্র তার ভাষায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী এক যুদ্ধ শুরু করে।
হামলার উদ্দেশ্য
১৯ জন হামলাকারীর সবাই ছিলেন সৌদি আরব এবং অন্য কয়েকটি আরব দেশের নাগরিক। বলা হয় সে সময়ের পলাতক ওসামা বিন লাদেন এ হামলার জন্য অর্থায়ন করেছিলেন। ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন, পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সামরিক উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে সংশ্লিষ্টরা এ হামলা চালিয়েছিলেন বলে বলা হয়।
হামলার পরিকল্পনা এবং পূর্ব উপকূল থেকে যাত্রা
হামলাকারীদের কয়েকজন এক বছরের বেশি সময় যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়েছেন এবং কয়েকটি বাণিজ্যিক ফ্লাইং একাডেমি থেকে বিমান চালনার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। বাকি কয়েকজন হামলার কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। তাদের কাজ ছিল হামলাকারীদের শক্তিবৃদ্ধি করা। তারা সহজেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বক্স কাটার এবং ছুরি নিয়ে বিমানে উঠতে সক্ষম হন। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় তিনটি বিমানবন্দর থেকে ক্যালিফোর্নিয়াগামী চারটি বিমানে চেপে বসেন তারা। গন্তব্য হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়াকে বেছে নেয়ার কারণ একটাই, দীর্ঘ যাত্রার জন্য জ্বালানিপূর্ণ থাকে এসব বিমান।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নতুন করে
২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবরে একই জায়গায় আবার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে কংক্রিটের কাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। গ্লাস এবং ইন্টেরিয়রের কাজ শেষে এ বছরের মাঝামাঝি (২০১৪) সময়ে অনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার কথা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের।
যাত্রীবাহী বিমান যে কারণে ধ্বংসাত্নক
সামরিক বিমান বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক বহন করে, ফলে সেটির আঘাতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। কিন্তু যাত্রীবাহী বিমানে কোন বিস্ফোরক থাকে না। তবু মাত্র দু’টি বিমানের আঘাতই ১১০ তলা ভবন দু’টিতে ধস সৃষ্টি করেছিল। বিমানগুলো সেসময় জ্বালানি ভর্তি ছিল। বিপুল পরিমাণ জ্বালানিই ছিল বড় মাত্রায় বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। আর এ বিস্ফোরণের ফলে ভবন দু’টো ধসে পড়ে, বিমানের আঘাতে নয়।
No comments:
Post a Comment