দোকান থেকে আসার সময় সিগারেট নিলাম ২টা। রাতটা পার করতে হবে,রাতটাও মনে হয় অনেক বেশি হয়ে গেছে।হোস্টেলের গেটের পাশে দাড়িয়ে থাকা দারোয়ানটাও দেখছি ঝিমুচ্ছে।যাই হোক, গেইট দিয়ে প্রবেশ করা যাবেনা দেয়াল টপকে চলে গেলাম রুমে। একটা মোমবাতি জ্বালালাম।ডায়েরিটা নিলাম পুরোনো লেখাগুলো বার বার পড়ছি।প্রতিদিন ঠিক এই সময়টাতে আমি ডায়েরীতে লেখাগুলো পড়ি।
১৩,০৮,২০১৬ বিকাল ৫ টা রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছিলোনা।ছাদে দাড়িয়ে ব্যাস্ত শহরটাকে দেখছিলাম।প্রায় বিকেলবেল আমি ছাদে এসে দাড়িয়ে থাকি।ইদানিং বাইরেও বেরুতে ইচ্ছে করেনা। হঠাৎ কোত্থেকে জানি গায়ের উপর একটা কাগজ এসে পড়লো, মনে হয় বাতাসেই উড়ে এসেছে।খুললাম,মনে হচ্ছে একটা একটা কবিতা।
নাহ কবিতা বললে ভুল হবে।একটা পেইজের মধ্যে খুব সুন্দর ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করেছে মনে হচ্ছে।'
যিনি লিখেছেন তার নাম অবশ্য লেখা নেই। লেখাটা ছিল এইরকম,,,,,,,,
খুব ভালো লাগে মুহুর্তটা, যখন তুমি আনমনে তাকিয়ে থাকো একদিকে। তোমার উস্কখুস্ক চুলগুলো আরো বেশি ভালো লাগে।আচ্ছা তুমি আশে পাশে তাকাওনা কেন? কেন বুঝনা তোমাকে কেউ প্রতিদিন ফলো করে। কেউ তোমাকে অনেক ভালোবাসে।বিকালের অই মূহুর্তটাতে তোমাকে না দেখতে পেলে আমার কাছে পৃথিবীটাই অসহায় মনে হয়।এই তুমি হাসোনা কেন,তুমি কি জানোনা তোমার হাসির মুল্য আমার কাছে পৃথিবীটার চাইতেও বেশি।
আর বেশি পড়লাম না, কারণ অন্যের চিঠি আমি পড়ে কোনো লাভ নেই।আশে পাশে তাকালাম পাশের বাসার ছাদে দুইটা মেয়ের ছায়া দেখা গেলো। আমি ভাবলাম পেপারটা তাদের হতে পারে।তাই ছুড়ে মারলাম পাশের ছাদে,নেমে এলাম নিচে।
ইদানিং সকালটা আমার রুটিনের বাইরে চলে যাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে।কলেজের ক্লাস মিস হয়ে যাবে এই ভেবে সকালের নাস্তাটা ও করা হয়না।
গতকাল রিক্সায় করে যাচ্ছিলাম কলেজে।হঠাত মনে হলো পাশাপাশি আমার পিছনে আরো একটি রিকক্সা।প্রায় এমন মনে হয়,পিছনে তাকালাম রিক্সায় একটি মেয়েকে দেখতে পেলাম।মেয়েটাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে। হুম মনে পড়েছে,আমাদের পাশের বাসার গেটের সামনে প্রায় এই মেয়েকেই তো দেখতে পাই।কিন্তু মেয়েটা আমাকে ফলো করছে।ধুর! কি সব ভাবছি মেয়েটা আমাকে ফলো করতে যাবে কেন।কলেজে গেলে কয়েকটা মেয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে হাসে। মেয়েগুলাকে তো প্রায় পাশের বাসার মেয়েটার সাথে দেখি।আমি জোকার নাকি আমাকে দেখে হাসতে হবে কেন।বাসায় চলে এলাম। মনে মনে ভাবছি দিন দিন মানুসের হাসির পাত্র হয়ে যাচ্ছি ঘটনা কি? ধুর কিচ্ছু ভাল্লাগছেনা।ছাদে চলে গেলাম।মোবাইলটা পকেট থেকে থেকে বের করবো এই মুহূর্তে চোখ গেলো ছাদের এককোনে একটা গোলাপ পড়ে আছে। পড়ে আছে বললে ভুল হবে কেউ রেখে গেছে।ফুলটা হাতে নেয়ার আগে রুমমেট সাকিনরে ডাক দিলাম।
-পাশের বাসায় তোর গফ থাকে?
-আস্তাগফিরুল্লাহ
-ফুলটা কোথা থেকে আসলো!? মন্র হচ্ছে পাশের ছাদ থেকে কেউ রেখে গেছে।
আমি আবার প্রশ্ন করলামঃআজ সারাদিনে বাসার কেউ ছাদে এসেছে?
-কই নাতো!
-ছাদে কোনো গোলাপ গাছ নেই যে গাছ থেকে আসবে।
-আচ্ছা যা।
-অকে
সেদিন ব্যাপারটা নিয়ে আর মাথা ঘামালামণা।পরদিন যখন ছাদে গেলাম তখন ছাদের কোনায় একটি কাগজ দেখতে পেলাম। প্রতিবারের মতো এবারো হাতে নিলাম।পড়লাম কবিতাটা, বাহ,সুন্দরতো এবার আর সংকোচ না করে কাগজটা পকেটে পুরে নিলাম।কবিতাটা বার বার পড়তে লাগলাম,। সে রাত কবিতাটার দিকে চেয়ে কাটিয়ে দিলাম।অপেক্ষা করতে লাগলাম পরদিন বিকালের। কারন পরদিন বিকাল মানেই আরো একটি কবিতা।হুম প্রতিদিনি কেউ একজন কবিতা রেখে যায়।মাঝে মাঝে ভাবি অন্যের কবিতাগুলো এনে আমি অন্যায় করছি। কারণ কবিতাটা হয়তো অন্য কারো প্রাপ্য। পরে আবার লোভ সামলাতে পারিনা।
ধীরে ধীরে ভালোবাসতে লাগলাম কবিতাগুলোকে।এতদিনে তার কবিতাগুলো পরে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছি যে, যিনি লিখেছেন তিনি একজন মেয়ে।মেয়েটার কবিতা গুলো এতো সুন্দর। না জানি মেয়েটা কত সুন্দর।আচ্ছা কবিতাগুলো ওর না তো?কিছুদিন আগে পাশের বাসার ছাদে একটা মেয়েকে দেখেছিলাম?কলেজে ইদানিং যাওয়া হচ্ছিলোনা।আজ অনেকদিন পর বেরুলাম।আমার অবশ্য রিক্সা পেতে কস্ট হয়না। রিক্সাওয়ালা মনে হয় যানেন আমি কোন সময় বের হব।আবার মনে হয় কেউ একজন আমার জন্য রিক্সা ঠিক করে রাখে। না হ কি যা তা ভাবছি? অন্য কেউ কেনো আমার জন্যে রিক্সা ঠিক করে রাখবে।কলেজে যাওয়ার পর আবার সেই প্যারা সহ্য করতে হল। সেই মেয়ে গুলার কাহিনী।আচ্ছা মেয়েগুলার ঘরে কি বাপ, ভাই নেই?যাক আমার ওত ভেবে কাজ নেই।বিকালে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম।আজ সেই মেয়েটিকে দেখবোই যে ছাদের উপর কবিতা রেখে যায়।দুপুরের খাবার খেয়ে সোজা ছাদে চলে গেলাম, আর লুকোলাম ছাদের এক কোণায়।হঠাত একটা মেয়েকে দেখলাম তাদের বাসার ছাদ ক্রস করে আমাদের বাসার ছাদে আসছে।দুই বাসার ছাদ জোড়া লাগানো যার ফলে আসতে কস্ট হচ্ছেনা।মেয়েটাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে। হ্যা মনে পড়েছে পাশের বাসার মেয়েটি। যাকে আমি প্রতিদিনা গেইটেএ সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখি।আর মেয়েটার হাতে কি? কাগজ মনে হচ্ছে। তারমানে কবিতা গুলো এই মেয়েটা দিয়ে যায়।নাহ আর ভাবতে পারছিনা। বেরিয়ে এলা।এলাম আড়াল থেমে ডাকলাম মেয়েটিকে।
-এই যে দাড়ান।(মেয়েটি অপরাধির মতো ঘাবড়ে গেল)
-জি বলুন।
-কবিতাগুলো তাহলে আপনার লেখা।
-ইয়ে মানে হ্যা।
-কারো জন্যে রেখে যান প্রতিদিন তাইনা?
-হুম
-আমিতো অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।
-কি?
-আপনার সবগুলো কবিতা আমি নি গিয়েছি।কারণ কবিতাগুলো আমার খুব ভালো লাগে।
-সমস্যা নেই। সেগুলো আপনার জন্যেই লেখা।
-কি?আমার জন্যে লেখা?আমার জন্যে আপনি কবিতা লিখতে যাবেন কেন।
-কারন আমি আপনাকে ভালোবাসি।অনেক আগে থেকে আপনার সামনে আসার সাহস হতনা তাই দূর থেকে দেখতাম। প্রতিদিন রিক্সায় করে আপনাকে ফলো করতাম।আর আপনার বাসার সামনে আমি ই আপনার জন্যে রিক্সা ভাড়া করে রেখে দিতাম।আর কলেজে মেয়েগুলো আপনাকে দেখে হাসতো কারন তাদের আমি বলেছিলাম আমি আপনার গফ।
-আমি খুব ভাগ্যবান।
-কেন।
-কারণ এমন একটি মেয়েকে পেয়েছি যে আমাকে অনেক ভালোবাসে।বিশ্বাস কর আমিও তোমার কবিতাগুলোকে অনেক বেশি ভালোবেসে পেলেছিলাম।এবং সেই মানুসটিকে যে কবিতাগুলো লিখেছে।
-সত্যি
-হুম
সেদিন তাকে কথা দিয়েছিলাম সারাজিবন তার হাতটি ধরে রাখবো। কিন্তু পারলাম না।
ক্যান্সার ধরা পরে তার শরীরে। রিলেশনের কিছুদিন পরেই।
আর তাকে ছাড়তে হয় পুরো পৃথিবীটা।
আমি হয়ে যাই একা, বড় একা।সিগারেটটা ছাড়া আর অন্য কেউ আমাকে সংগ দিতে চায় না।এভাবেই হয়তো কেটে যাবে আমার জিবনের বাকি দিনগুলো।আর মাঝে মাঝে মনে পড়বে সেই পরিত্যক্ত ডায়েরিটার কথা যেখানে আছে আমার আর তার হাজারো স্মৃতি।
- লেখকঃসাব্বির আহমেদ
No comments:
Post a Comment